জেলা প্রতিনিধি, নড়াইল: দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্নের মধুমতি কালনা সেতু। প্রথম ছয় লেনের মধুমতি কালনা সেতু উদ্বোধনের দ্বিতীয় দিনে সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে একটু স্বপ্ন পূরণের স্বাদ গ্রহণ করার চেষ্টা করছে দর্শনার্থীরা।
মঙ্গলবার (১১ অক্টোবর) দুপুরের প্রচন্ত রোদের মধ্যে ভিতর দাঁড়িয়ে আছে সেতুর ওপরে দর্শনার্থীরা।
বিকালে সেতু ও তার দুই প্রান্ত জুড়ে কয়েক হাজার উৎসুক মানুষের ঢল নেমেছে। দীর্ঘদিনের দুর্ভোগের পর কাঙ্খিত সেতুর উদ্বোধন যেন অন্যরকম আবেগ, অনুভূতিতে একাকার হয়ে গেছে। স্বপ্ন পূরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন নানা শ্রেণীর পেশার মানুষ।
মধুমতি সেতু বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে নড়াইল-গোপালগঞ্জের পাশাপাশি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীসহ প্রায় সারাদেশের সঙ্গে নতুন সেতুবন্ধন তৈরি হয়েছে। সেতুর ওপর উঠতে পেরে স্বপ্ন পূরণের স্বাদ উপভোগ করেন। অনেকেই পায়ে হেঁটে লোহাগড়া প্রান্ত থেকে ভাটিয়াপাড়া মোড় পর্যন্ত চলে যান। আবার সেতুর মাঝখানে দাঁড়িয়ে মধুমতি নদীর অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করেন।
চরকালনা গ্রামের মারজান বলেন, ‘সেতুটি উদ্বোধনের দ্বিতীয় দিনে সুযোগ পেয়েই সেতুর ওপর চলে এসেছি। প্রচন্ড রোদকে উপেক্ষা করে সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে স্বপ্ন পূরণের আনন্দ উপভোগ করছি। সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে মধুমতি নদীর সৌনন্দ উপভোগ করেছি। আগে নৌকা পার হয়ে গোপালগঞ্জ এলাকায় আসতে হতো। এখন পায়ে হেঁটেই চলে এসেছি।’
লোহাগড়া উপজেলার আমাদা গ্রামের রইচ উদ্দিন টিপু বলেন, ‘মধুমতি সেতু আমাদের স্বপ্নকে পরিপূর্ণতা এনে দিয়েছে। পদ্মাসেতু চালুর পরও নড়াইল, যশোর, সাতক্ষীরা, খুলনার একটি অংশের মানুষের দুর্ভোগ ছিল কালনা ফেরীঘাট। দীর্ঘ যানজটের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। মধুমতি সেতু চালুর মধ্যদিয়ে দুর্ভোগ লাঘব হলো এবং স্বপ্নের পরিপূর্ণতা পেল। এখন থেকে নড়াইলবাসীকে ঢাকা যেতে আর কোনো ফেরী পার হতে হবে না। নড়াইল থেকে মাত্র ২ ঘণ্টায় রাজধানী ঢাকায় পৌঁছাতে পারবো।’
নড়াইল-২ আসনের এমপি মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা বলেন, ‘আবেগ আর ভালোবাসার নাম পদ্মা ও মধুমতি কালনা সেতু। পদ্মা সেতু চালু হলেও মধুমতি সেতু চালু না হওয়ায় আমরা পরিপূর্ণ সুবিধা ভোগ করতে পারছিলাম না। মধুমতি সেতু চালুর মধ্যদিয়ে আমাদের সকল ধরণের ভোগান্তি শেষ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে।
সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ই¤প্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে মধুমতি সেতু নির্মিত হয়েছে। নেলসন লোস আর্চ টাইপের (ধনুকের মতো বাঁকা) সেতু এটি।
সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬৯০ মিটার এবং প্রস্থ ২৭ দশমিক ১ মিটার। উভয় পাশে ছয় লেনের সংযোগ সড়ক প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার। সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় প্রায় ৯৬০ কোটি টাকা। এশিয়ান হাইওয়ের ওপর অবস্থিত এটি।
-শরিফুল ইসলাম